Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

পার্বত্য অঞ্চলে দারুচিনি

বাঙালির রান্নার বিভিন্ন বাহারি মসলার মধ্যে অন্যতম মসলা হচ্ছে গরম মসলা। আর গরম মসলার অন্যতম উপাদান হলো দারুচিনি। বিশেষ সুগন্ধ ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত দারুচিনি যে কোন মাংস রান্নায় অপরিহার্য। মসলা হিসেবে দারুচিনির ব্যবহার সুপ্রাচীন। মসলা হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি দারুচিনির রয়েছে ভেষজ ও ঔষধি গুণ। দারুচিনির বাকলে থাকে ‘সিনামালডিহাইড’ যা এর সুঘ্রাণ সৃষ্টি করে। আর পাতায় থাকে  ‘ইউজিনল’। তাছাড়া এতে রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মিনারেল ও ভিটামিন। দারুচিনি গাছের প্রায় প্রতিটি অঙ্গ যেমন- বাকল, পাতা, কুঁড়ি, ফুল, ফল ও শেকড় কোন না কোন কাজে লাগে। এর বাকল উত্তেজক ক্ষুধাবর্ধক এবং বমি   নিবারক। তাছাড়া পেটের অসুখ, হার্টের দুর্বলতা, অর্শ, আমবাত, কফ সারতে সাহায্য করে। পাতার তেল সুগন্ধি তৈরিতে ও কৃত্রিম ভ্যানিলা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। মদের স্বাদ ও সুগন্ধ বৃদ্ধিতে, ওষুধ শিল্পে, সাবান ও দাঁতের মাজন তৈরিতে, চকোলেট কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্পে  দারুচিনি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।


Lauraceae পরিবারের দারুচিনির ইংরেজি নাম Cinnamon, আর বৈজ্ঞানিক নাম Cinnamomum zeylanicum. চির সবুজ মাঝারি আকারের ঝোপালো শাখাযুক্ত এ গাছ ১০ থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। দারুচিনির আদি নিবাস শ্রীলংকা। বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ ভালো মানের দারুচিনি শ্রীলংকায় উৎপন্ন হয়। ভারত, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, চীন, মালয়, ওয়েস্টইন্ডিজ, দক্ষিণ আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে বর্তমানে সাফল্যের সাথে বাণিজ্যিকভাবে দারুচিনির চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া দারুচিনি চাষের জন্য উপযুক্ত। দেশের সর্বত্র বিশেষ করে পার্বত্য এলাকার অমøধর্মী মাটি সমৃদ্ধ পাহাড়ের পতিত ঢালে খুব সহজেই দারুচিনির বাণিজ্যিক বাগান করা যেতে পারে। দেশের পার্বত্য অঞ্চলের মোট আয়তন ১৩,২৯,৫০০ হেক্টর বা ১৩,২৮১ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে এ অঞ্চল বাংলাদেশের মোট আয়তনের এক-দশমাংশ হলেও ভূপ্রকৃতিগত কারণে এ অঞ্চলের আবাদি জমির পরিমাণ ১৮১৫৯৪ হেক্টর, যা মোট আয়তনের মাত্র ১৪%। পার্বত্য অঞ্চলে আবাদযোগ্য অনাবাদি জমি আছে প্রায় ৩৭০৮৪ হেক্টর। এসব আবাদযোগ্য অনাবাদি জমিতে পরিকল্পিতভাবে দারুচিনির বাগান গড়ে উঠতে পারে।


জাত ও প্রজাতি : সারা বিশ্বে দারুচিনির বেশ কয়েকটি জাত চাষ হয়ে থাকে। এদের দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে যথা- সিনোল বা প্রকৃত দারুচিনি এবং জংলী বা ঝুটা দারুচিনি। প্রকৃত দারুচিনি বাদমি রঙের, অধিক সুঘ্রাণযুক্ত, পাতলা, মসৃণ, বেশি সুস্বাদু ও মিষ্টি। শ্রীলংকায় প্রকৃত দারুচিনির উৎপাদন বেশি হয়। আর জংলী দারুচিনির মধ্যে চীনা, সায়গন, ইন্দোনেশিয়ান, অস্ট্রেলিয়ান, ভারতীয় প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক সারাদেশে চাষযোগ্য দারুচিনির একটি জাত অবমুক্ত করা হয়েছে, যা বারি দারুচিনি-১ নামে পরিচিত। এ জাতটির বাকলে অতি মাত্রায় সুঘ্রাণযুক্ত উদ্বায়ী তেল রয়েছে এবং জিংক সমৃদ্ধ। খরা ও লবণাক্ততা সহনশীল। আর হেক্টর প্রতি ৩৮৫ কেজি বাকল পাওয়া যেতে পারে।


জলবায়ু ও মাটি : কষ্ট সহিষ্ণু এ গাছ যে কোনো মাটিতে যেমন- লাল ও বেলে মাটিতে চাষ করা যায়। তবে বেলে দোঁআশ মাটিতে চাষ করলে গাছের বাকলের গুণগতমান বাড়ে। দারুচিনি আর্দ্র ও শুষ্ক আবহাওয়ায় ভালো হয় কিন্তু একটানা খরা সহ্য করতে পারে না। এক হাজার মিটার উঁচু পাহাড় ও টিলাতেও সাফল্যজনকভাবে চাষ করা যায়। বছরে ২০০ থেকে ২৫০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত দারুচিনি গাছের জন্য উপযোগী।


চারা তৈরি : সাধারণত বীজ থেকেই দারুচিনির চারা তৈরি করা হয়, তবে গুটিকলম বা কাটিং করেও চারা তৈরি করা যায়। জুলাই-আগস্ট মাসের দিকে ফল পাকলে গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করার সাথে সাথে বীজতলায় বপন করতে হবে। বিলম্ব করলে বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। বীজতলায় চারা গজানোর পর ৫-৬ মাস কৃত্রিম ছায়া দানের ব্যবস্থা করতে হয়। বীজতলায় চারার বয়স ৬ মাস হলেই সেখান থেকে সাবধানে তুলে পলিব্যাগে বা টবে স্থানান্তর করতে হবে। এবপর চারার বয়স ১-২ বছর হলে তা মূল জমিতে লাগানোর উপযুক্ত হয়।  


জমি তৈরি ও চারা রোপণ : বর্ষাকালে গাছ থেকে গাছ এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব ২-২.৫ মিটার রেখে গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্তের আকার হবে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতা ৬০ সেমি. করে। তবে পার্বত্য এলাকায় গর্তের গভীরতা একটু বেশি রাখাই উত্তম।


সার ব্যবস্থাপনা : দারুচিনি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ বিধায় সার ব্যবস্থাপনা খুব গুরুত্বপূর্ণ। চারা লাগানোর ১ সপ্তাহ প্রতি গর্তে ১০ কেজি জৈবসার বা গোবর সার, ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৭৫ গ্রাম এমওপি সার দিতে হবে। ২য় বছর সারের মাত্রা দ্বিগুণ করতে হবে। এভাবে প্রতি বছর সারের মাত্রা বাড়াতে হবে। আর প্রাপ্ত বয়স্ক একটি গাছে (১০ বছর বা তার বেশি) প্রতি বছর ১৫-২০ কেজি জৈবসার, ৪৫০ গ্রাম টিএসপি, ৪০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০০ গ্রাম এমওপি সার দিতে হবে। সব সার সমান দুই কিস্তিতে মে-জুন মাসে একবার এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে আর একবার দিতে হবে। সব সার গাছের গোড়া থেকে কিছুটা দূরে রিং পদ্ধতিতে দিতে হবে।


দারুচিনি গাছের পরিচর্যা : দারুচিনির বাগানে নিয়মিত পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে গাছের গোড়ায় যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাগানের আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করে গাছের গোড়ায় মালচিং বা জাবড়া প্রয়োগ করে খরা মৌসুমে মাটির আর্দ্রতা সংরক্ষণ করা যায়। গাছ ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হলে উপরের কা-গুলো ছেঁটে দিতে হবে। প্রধান কা-গুলো থেকে বের হওয়া পার্শ্ব বিটপগুলো বারবার ছেটে দিতে হবে। এতে ২ মিটার উচ্চতায় ঝোপের সৃষ্টি হবে।


দারুচিনি গাছের রোগবালাই ব্যবস্থাপনা : দারুচিনি গাছের রোগবালাই খুব একটা পরিলক্ষিত হয় না। তবে মাঝে মাঝে ছত্রাকজনিত কিছু কিছু রোগ দেখা দিতে পারে। যেমন- গোলাপি রোগ, চারা ধসা রোগ, মরচে ধরা রোগ, পাতায় দাগ ইত্যাদি। আর পোকামাকড়ের মধ্যে লিফ মাইনর, পাতা খেকো লেদা পোকা, লাল পিপড়া উল্লেখযোগ্য। এসব রোগ বা পেকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে তা সময়মতো দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে।


দারুচিনির বাকল সংগ্রহ ও শুকানো : গাছের বয়স ৩ বছর পার হলেই গাছের বাকল সংগ্রহ করা যায়। এ সময় গড়ে গাছ ২ মিটার লম্বা হয় ও গাছের গোড়া ১০-১২ সেমি. মোটা হয়। এপ্রিল-মে মাসে একবার এবং নভেম্বর মাসে আর একবার অর্থাৎ বছরে ২ বার বাকল উঠানো যায়। সাধারণত সকাল বেলা ১-৩ সেমি. ব্যাসের এবং ১.৫-২ মিটার পরিমাণ লম্বা করে ডাল কেটে এনে পাতা ও ডগা ছেঁটে ফেলে গোছা বেঁধে স্তূপ করে রাখা হয়। এতে ডালের সংগে লেগে থাকা অবশিষ্ট পাতাগুলোও ঝরে যায়। গোড়া থেকে এভাবে ডাল কেটে ফেললে আবার ডালপালা গজায় এবং পরের বছর আবার বাকল সংগ্রহ করার উপযুক্ত হয়। কর্তিত ডালগুলোর বাকল হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে থেঁতলে বা ঢিলা করে দিলে বাকলের ভেতরের স্তর কাগজের মতো রোল করে উঠে আসবে। আবার বিশেষ ধরনের ছুরি (যার ধারালো ফলার সামনের দিকটা গোল ও অল্প বাঁকানো এবং সামান্য খাঁজ কাটা) দিয়েও ডাল থেকে বাকল ছাড়ানো হয়। বাকলের বাইরের অমসৃণ ছাল ঘষে বা ছাড়িয়ে তুলে দেয়া হয়, তারপর পিতলের দ- দিয়ে ঘষে ঘষে মসৃণ করা হয়। এরপর ডালটির একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত লম্বালম্বিভাবে চিরে দেওয়া হয়। ঐ বিশেষ ধরনের ছুরির সাহায্যে কাষ্ঠল অংশ থেকে বাকল আলাদা করা হয়। ডাল যেদিন কাটতে হবে বাকল সেদিনই উঠাতে হবে। উঠানো বাকলগুলো ছায়াযুক্ত জায়গায় সারারাত গাদা দিয়ে রাখতে হবে। এরপর এগুলোকে একদিন ছায়ায় শুকানোর পরে ৪-৫ দিন বাঁশের চাটাই বা পলিথিনের ওপর রেখে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। বাকলের বাইরের খসখসে স্তর ফেলে দিয়ে রোদে শুকিয়ে নিলে চোঙ্গাকৃতি নলের মতো বা কুইল হয়ে যায়। ছোট নলগুলো বড় নলের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে যৌথ নল বানানো হয় তাতে করে ওগুলো ভেঙ্গে যাবার আশঙ্কা কম থাকে। গাছের মোটা ডাল থেকে চেঁছে নিয়ে ‘চাঁছা দারুচিনি’ এবং বিভিন্ন শ্রেণির দারুচিনি গুঁড়ো করে ‘গুঁড়ো দারুচিনি’ বানানো হয়।


সংরক্ষণ : সংরক্ষণের জন্য ভালো মানের দারুচিনি গ্রেডিং অর্থাৎ আলাদা করতে হবে। পাতলা, মসৃণ ও বাদামি রঙের বাকলকেই ভালো বা উঁচুমানের দারুচিনি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ঘরের ঠাণ্ডা বা শীতলতম এবং শুষ্ক স্থানে বা বড় পাত্রের মুখ এঁটে কয়েক মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। তাছাড়া ফ্রিজে রেখেও দারুচিনি সংরক্ষণ করা যায়। খোলা অবস্থায় বাতাসের সংস্পর্শে রাখলে  দারুচিনির ঘ্রাণ সৃষ্টিকারী সিনামালডিহাইড নামক রাসায়নিক পদার্থ আস্তে আস্তে উড়ে যায়।  


ফলন : সঠিক পরিচর্যা করলে একটি বাগান থেকে হেক্টরপ্রতি ৩৫০-৪০০ কেজি শুকনা দারুচিনি পাওয়া যায়।


বিপুল সম্ভাবনাময় এ মসলা ফসলটির আবাদ বৃদ্ধি, চাষাবাদ ও উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে আগ্রহী কৃষক ও সম্প্রসারণকর্মীদের জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়ন, সাধারণ কৃষকদের উপকরণ সরবরাহ এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে নতুন প্রকল্প বা কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে। এর ফলে আমদানি নির্ভর এ মসলাটি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে। পরিবেশ সুরক্ষা ও পাহাড় ক্ষয় রোধের পাশাপাশি এলাকার কৃষকদের টেকসই আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

কৃষিবিদ প্রসেনজিৎ মিস্ত্রি

আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিসের আঞ্চলিক কার্যালয়, রাঙ্গামাটি অঞ্চল। ফোন : ০১৭১২৮১৬৩৫২ ই-মেইল : rangamati@ais.gov.bd


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon